September 27, 2025, 2:51 pm

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন পোর্টাল
সংবাদ শিরোনাম :
দুর্গাপূজা উপলক্ষে সারাদেশে র‌্যাবের ২৮১ টহল দল মোতায়েন ভারত চাল রফতানিতে নতুন নিয়ম জারি করেছে, বাংলাদেশের আমদানিতে প্রভাব কুষ্টিয়ায় হত্যাকাণ্ড/ট্রাইব্যুনালে ইনুর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা কুষ্টিয়ার দৈৗলতপুরে গৃহবধুকে পালাক্রমে ধর্ষণ, গ্রেপ্তার ৩ নির্বাচনে আ. লীগ ও জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণ চান মির্জা ফখরুল নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে মুফতি আমির হামজাকে আইনি নোটিশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সঙ্গীত ও নৃত্যের শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে নাগরিকদের আহ্বান দুর্গাপূজা/ ভারতে ৫০০ কেজি চিনিগুঁড়া চাল উপহার পাঠলো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চুয়াডাঙ্গায় ধর্ষণের অপরাধে যুবককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ছয় মাসে ব্যাংক খাতে চাকরি হারালেন ৯৭৮ জন

মাইলস্টোনে নিহত রজনীর দাফন সম্পন্ন, শোকস্তব্ধ কুষ্টিয়ার দৌলতপুর

নাজমুল ইসলাম, দৌলতপুর, কুষ্টিয়া/
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তে নিহত রজনী খাতুনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জানাজা শেষে সকাল ১০টায় কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের সাদিপুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
দাফনের সময় পুরো গ্রামজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। সকাল থেকেই ভিড় করেন আত্মীয়-স্বজন ও এলাকার শত শত মানুষ। কান্নায় ভেঙে পড়েন রজনীর সন্তানরা, স্বজনরা।
রজনী খাতুন (৩৮) ছিলেন সাদিপুর গ্রামের গার্মেন্টস ব্যবসায়ী জহুরুল ইসলামের স্ত্রী। তিনি মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার বাওট গ্রামের বাসিন্দা ও মটমুড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল হামিদের মেয়ে। রজনী ও জহুরুল প্রায় দুই দশক ধরে সন্তানদের নিয়ে ঢাকায় বসবাস করতেন।
তাদের তিন সন্তান—বড় ছেলে এস এম রুবাই ইসলাম এইচএসসি পরীক্ষার্থী, মেজো ছেলে এস এম রোহান ইসলাম মাইলস্টোন স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণিতে ও ছোট মেয়ে জুমজুম ইসলাম পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে।
সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে আগুন। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।
সেদিন দুপুরে মেয়েকে আনতে স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন রজনী খাতুন। আগুন লাগার খবর পেয়ে মেয়েকে খুঁজতে তিনি ছুটে যান ভবনের দিকে। কিন্তু তখনই একটি বিমানের ধ্বংসাবশেষ এসে আঘাত করে তাঁর মাথায়।
রজনীর মেয়ে জুমজুম অন্যদের সহায়তায় স্কুল ভবনের বাইরে বেরিয়ে এলেও মা ভেবেছিলেন তিনি শ্রেণিকক্ষে আটকে আছে। মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেই প্রাণ হারান।
রজনীর স্বামী জহুরুল ইসলাম বলেন, তিনি চট্টগ্রামে ছিলেন ব্যবসার কাজে। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঢাকায় ছুটে আসেন। ছেলেমেয়েদের খোঁজ পেলেও স্ত্রীর কোনো সন্ধান পাচ্ছিলেন না।
“পরে এক আত্মীয় ফোন করে জানায়, সামরিক হাসপাতালে একটি মরদেহ আছে। গিয়ে দেখি—সে আমার রজনী। একটু দূর থেকেই তার শাড়ি দেখে চিনে ফেলি। মাথার পেছনে ছিল গভীর আঘাত। শরীরে আগুনের দাগ ছিল না।”
রজনীর ভাই আশিকুল ইসলাম বলেন, “মেয়েকে খুঁজতে গিয়েই বোনকে প্রাণ হারাতে হলো। প্রতিদিন ও-ই বাচ্চাদের স্কুলে আনা-নেওয়ার দায়িত্ব পালন করত। দুর্ঘটনার সময়ও মেয়েকে বাঁচাতেই ভবনের দিকে ছুটে যায়।”
শেষ বিদায়: রাষ্ট্রীয় শোকের আবহে/
রজনীর মরদেহ সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকার সামরিক হাসপাতাল থেকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রাত ১০টার দিকে মরদেহ নিয়ে গ্রামের পথে রওনা দেয় পরিবার। ভোররাতে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বাওট গ্রামের পিত্রালয়ে কিছু সময় রাখা হয় মরদেহ। পরে সকাল ৭টার দিকে পৌঁছায় কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে।
সকাল ৯টায় জানাজা হয় সাদিপুর ঈদগাহ ময়দানে। জানাজায় অংশ নেন দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল হাই সিদ্দিকী। তিনি বলেন,
“এই শোক শুধু একটি পরিবারের নয়, পুরো জাতির। একজন মা, একজন মানবিক মানুষ, একজন সাহসী নারীর এমন মৃত্যু কখনোই পূরণ হবার নয়।”
একটা পরিবারের জীবনে অপূরণীয় ক্ষতি/
রজনী খাতুনের মৃত্যুতে তার সন্তানদের জীবন একটি শূন্যতায় আচ্ছন্ন। ছোট্ট জুমজুম জানায়, “মা প্রতিদিন স্কুলে নিয়ে আসত, আবার নিয়ে যেত। এখন আর মা আসবে না। আমি আর কখনো মায়ের সঙ্গে স্কুলে যেতে পারব না।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Comments are closed.

পুরোনো খবর এখানে,তারিখ অনুযায়ী

© All rights reserved © 2024 dainikkushtia.net
Maintenance By DainikKushtia.net